শুভ আঢ্য

ক'টি **র কবিতা / 

শুভ আঢ্য




মোটামুটিভাবে প্রতিটি তাসই জানতে পেরেছে অপর তাসেদের প্রত্যেকের ভেতরেই আছে এক একটি রাজহাঁস এবং শটগান। তারা জানে রাজহাঁসের গান শোনার মতো নয়, আর শটগানগুলো নেহাতই ব্যবহার করতে হবে বলে করা, নয়তো, তার থেকে কোনো বেহালার ছড় দিয়েও খুন করা সহজ। হত্যা নিয়ে এসব ডিলেমা বাচ্চাদের অঙ্কের বইতে থাকে, যেখানে এক্স ও ওয়াই কেবল অক্ষ মাত্র। কপিবুক স্টাইলে তাদের জানানো হয় অপরাধের পর সংঘটিত হবার মতো ঘটনা আর কিছু নেই। অক্ষদুটির অসীম বিস্তারের দিকে তাকালে দেখা যায়, অপরাধ করার আগে দুই আততায়ীই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে আর অপরাধের পর তাদের রাজহাঁস পুষতে ইচ্ছে করে। অথচ প্রতিটি তাসই জানে তাদের আস্তিনে লুকোনো শটগানের কথা। তারা জানে হাঁসেদের গলায় রাত নামলে শটগানগুলি খলবল করে ওঠে পিরানহার মতো। ঘরের ভেতর শর্তাধীন পরিস্থিতির মতো ঘুরে বেড়ায় হাঁসগুলি। প্রতিটি পরিস্থিতিতেই আততায়ীরা মুক্তির কথা ভাবে। মুক্তি একটি পরিণত ফল, পিচ রঙের। কোনো কোনো অপরাধের ভেতর তা থাকে। অনেকাংশে সাদা পালকে ঢাকা রাজহাঁসের ছবিই অপরাধ বলে বাচ্চাদের শেখানো হয়।

সুতরাং সেখানে ছেদ... যতি নিয়ে হেঁটে চলেছে যে ল্যাঙড়া ছেলেটা তার নাম কমা, শব্দ করে করে যারা আমাদের কানে বাজে তার আগে বা পরে সে বসেছে কাঠের বেঞ্চিতে কখনও, কখনও বা শুধু মাটিতে... শতরঞ্জি বা মাদুরে বসাত যে সব আলংকারিকেরা, তারা অস্তাচলে... এখন কোথাও বেতের মোড়া, কোথাও বা রঙ করা টায়ার... তার প্যাণ্টে লেগে আছে শব্দের গোঙানি... গোঙানির রঙ কালো বা কালচে নীল বা কালচে ধূসর... প্রতিটা মহল্লায় রাত নামলে অমন ধূসর রঙের মহিলারা পায়চারি করে, চিকন ছেলেদের ধরে ল্যাম্পপোস্টের তলায় অন্ধকারে নিয়ে যায়... শব্দ ওসব অস্থানে কুস্থানে খুব একটা যেতে পারে না... যা যায়, ওই ল্যাঙড়া ছেলেটার ছায়া, সুতরাং সেখানে ছেদ... যতি নিয়ে আর কতই বা এগোনো যায়? টানা শ্বাসের মাঝে সামান্য পজটুকু... লোকে তাকে পিস হাভেন বা কখনওসখনও অন্য নামেও...

"বেল বাজলে বুঝবেন, শবদেহ সৎকার সমাপ্ত হয়েছে।” এমন বেল টানা বেজে চলেছে অথচ শবদেহগুলিকে দেখা যাচ্ছে না, কুয়াশায়। অথচ দুটি ঘরের বাইরে অগুন্তি শবদেহ। শববাহকেরা বিজ্ঞাপন দেখছে। যীশুর ছবির সামনে ইজের পরা এক মহিলা তাকিয়ে আছে মৃতদেহগুলোর দিকে। সে জানে না বিস্ময় কোথায় থাকে। খবরে বলা হয়েছে, বিপ্লব রেডবুক পড়ে যেদিন ফিরে আসবে, সেদিন শবগুলোও সিদ্ধান্ত নেবে উঠে বসার। তাদের ঘর সামলে, সন্তান সন্ততি সামলে, যে ঘটনাগুলো ঘটেনি, তা ঘটাবার পর আবার নিভে যাবে তারা। বেলটির লাগোয়া কুকুরের শহর। তারা অপেক্ষা করছে কখন তাদের দিকে মাংসের টুকরোটা ছুঁড়ে দেওয়া হবে! যদিও তারা দেখতে পাচ্ছে মাংসের গন্ধ, ঘ্রাণ পাচ্ছে ঢিবির। বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে মজবুত কাঠের কফিন, তার মালিক বা মালকিনের পরনে বিবাহের পোশাক। কারও বা মাথার কাছে প্রিয় রিস্টলেট বা রিস্টওয়াচ। স্থির, নির্ভরশীলতায় তারা বিশ্বাস অর্জন করেছে যে কফিনটি আদপেই মজবুত। শববাহকেরা বেলটিকে টানা বেজে যেতে শুনছে। তারা বুঝতে পারছে ইজের পরা মহিলাটিকে এবার জানিয়ে দেবার সময় যে সৎকার সমাপ্ত হয়েছে। যখন বিজ্ঞাপনের শেষে আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তির অপেক্ষা করছে যীশুর ছবির সামনে দাঁড়ানো মহিলাটি।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অঞ্জলি সেনগুপ্ত

সুকৃতি সিকদার

সম্পাদকীয়